টোকিও অলিম্পিকে জ্যাভলিনে ৮৭.৫৮ মিটার ছুড়ে সোনা জিতেছিলেন ভারতের নীরজ চোপড়া। অভিনব বিন্দ্রার পরে ভারতের ব্যক্তিগত সোনাজয়ীর তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। তবে, তিন বছর পরে ফের একই কীর্তি করার সুযোগ হাতছাড়া করলেন নীরজ। অলিম্পিক্সে দ্বিতীয় সোনা জিততে পারলেন না তিনি। প্যারিসে রুপো জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হল তাকে। তবে, এই ভারতীয় তারকা, সোনা না জিতলেও দেশকে একটি পদক এনে দিয়েছেন। যদিও নীরজ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম তার বন্ধু। আর এবার সেই বন্ধুর কাছেই হারতে হয়েছে নীরজকে। পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম শেষ থ্রোয়ে ৯০ মিটারের বেশি ছুড়ে গড়েন রেকর্ড। পেয়ে যান স্বর্ণপদক। এদিকে নীরজ সোনা না জিতলেও তিনিই একমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড়, যিনি অলিম্পিকে যেতেন একটি সোনা ও একটি রুপোর পদক। নীরজ রুপো জেতার পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে নীরজকে অভিনন্দন জানান।
হরিয়ানার পানিপথ জেলার খান্দরা গ্রামে জন্ম নীরজের।নীরজের অ্যাথলেটিক্সে আসা নিতান্তই কাকতালীয়। ছোট থেকে নীরজের একমাত্র দুর্বলতা ছিল খাবার। তিনি যেকোনো খাবার দেখলেই তা খবর জন্য রীতিমতো হামলে পড়তেন। খাবারের প্রতি নীরজের এই টানে ইন্ধন দিতেন তাঁর ঠাকুমা। আর ঠাকুমার প্রশ্রয় পেয়ে নীরজ অল্প বয়সেই একেবারে গোলগাল চেহারার হয়ে পড়েছিলেন। মাত্র ১২ বছরে তার ওজন দাঁড়িয়েছিল ৯০ কেজির বেশি। এরপর তার বাবা মা ওজন কমানোর জন্য জোর করে তাকে মাঠে খেলতে পাঠাতেন। তিনি শিবাজি স্টেডিয়ামে রোজ সকালে জগিং করতে যেতেন। আর সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় প্রাক্তন জ্যাভলিন থ্রোয়ার জয় চৌধরির। নীরজ, জয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে পর্যন্ত জানতেনই না যে, জ্যাভলিন কী জিনিস। এরপর একদিন জয় তাকে জ্যাভলিন ছুড়তে বলেন। আর প্রথম প্রচেষ্টাতেই নীরজ প্রায় ৪০ মিটার দূরে ছুড়েছিলেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে জ্যাভলিন নীরজের জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে ওঠে। এদিকে তার ওজনও ক্রমশ কমতে থাকে। চণ্ডীগড়ের ডিএভি কলেজে পড়াকালীন নীরজ বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন।
২০১৪ সালে দক্ষিণ এশীয় গেমসে ৮২.২৩ মিটার ছুড়ে জাতীয় রেকর্ড স্পর্শ করেন নীরজ। সেই বছরই পোলান্ডের বিডগজে অনুষ্ঠিত হওয়া আইএএএফ বিশ্ব অনূর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায় ৮৬.৪৮ মিটার ছুড়ে জিতে নেন সোনা। তৈরি করেন বিশ্ব জুনিয়র রেকর্ড। পরের বছর এশীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৮৫.২৩ মিটার ছুড়ে ফের জেতেন সোনা। ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে ৮৬.৪৭ মিটার ছুড়ে সোনা জেতেন এবং দোহা ডায়মন্ড লিগে ৮৭.৪৩ মিটার ছুড়ে ভাঙেন জাতীয় রেকর্ড। এশিয়ান গেমসে ৮৮.০৬ মিটার ছুড়ে জেতেন সোনা। ২০১৯ সালে কনুইয়ে চোট পেয়ে সেই চোট সারাতে গিয়ে সারা বছর প্রায় কোনও প্রতিযোগিতাতেই অংশগ্রহণ করতে পারেননি নীরজ। এরপর ২০২২ সালে এশিয়ান গেমসেও সোনা জিতেছিলেন নীরজ। এবারে প্যারিস অলিম্পিক্সের আগে নীরজের লক্ষ্য ছিল ৯০ মিটারের বেশি ছোড়ার, কিন্তু ব্যর্থ হন। গতবার সোনা জেতায় এবারের অলিম্পিকেওদেশবাসী নীরজের কাছে সোনার আশা করি, ভারতের সোনার ছেলে সোনা না জিতলেও তিনিই ভারতের প্রথম খেলোয়াড়, যিনি অলিম্পিক্সে একটি সোনা ও একটি রুপো জিতেছেন।