সম্প্রতি ওষুধের দামের উপর বিপুল ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে। আসলে রাজ্যে সরকারি হাসপাতাল-চত্বরে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানগুলিতে মূলত এই ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই দোকানগুলিতে বহুদিন যাবৎ ওষুধের দামের উপর ৬৫ থেকে ৬৭ শতাংশ ছাড়ের মাত্রা ছিল। এবার নতুন দরপত্র প্রক্রিয়ায় এপ্রিল মাসে এই দোকানগুলিতে ওষুধ বিক্রির জন্য মনোনীত ওষুধ সংস্থাগুলির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ওষুধের দামের উপর জিএসটি সমেত ৮৫ থেকে ৮৮ শতাংশ ছারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
এই ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানগুলি মূলত ‘ব্র্যান্ডেড জেনেরিক’ ওষুধ বিক্রি করে, যার বিজ্ঞাপন খরচ, প্যাকেজিং খরচ, ডাক্তারদের মধ্যে প্রচারের খরচ, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের খরচ ইত্যাদি না থাকায় দাম ‘ব্র্যান্ডেড ড্রাগ’-এর থেকে খানিক কম হয়। এই বিষয়ে অনেকেরই অভিমত, এই ধরনের ওষুধের মান যেন নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা হয়, কারণ হিমাচল প্রদেশ, চণ্ডীগড়, উত্তরাখণ্ড জুড়ে প্রচুর ওষুধের কারখানা গড়ে উঠেছে, যেখানে বিনা নজরদারিতে মুড়িমুড়কির মতো ওষুধ তৈরি হচ্ছে।
দেশে ড্রাগ কন্ট্রোলের পরিকাঠামো অত্যন্ত সীমিত ও নজরদারি নামমাত্র হওয়ায় সহজেই পেয়ে যাচ্ছে সরকারি ছাড়পত্র। বহু নামী সংস্থা, এই সব কারখানায় কমদামি ‘ব্র্যান্ডেড জেনেরিক’ ওষুধ তৈরি করে সরবরাহ করছে। সবচেয়ে বেশি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের দায়িত্ব পেয়েছে যে সংস্থা, তার কর্ণধার রেবতীরমণ কোলে বলেন যে, “চণ্ডীগড়, হিমাচলের বিভিন্ন উৎপাদকের থেকে আমরা সরাসরি ওষুধ কিনি। যেমন, এক কিলো প্যারাসিটামল তৈরি করতে ৭৫ টাকা খরচ পড়ে। সেটার এমআরপি হয়, এক পাতা ( মাত্র ১০টা) ২৩-২৪ টাকা! যদি একটা মেরোপেনাম ইঞ্জেকশন উৎপাদনে খরচ পড়ে ৭০ টাকা ধরা হয়, তবে তার এমআরপি হয় ১০৬৬ টাকা। এর ফলে ৮৫ থেকে ৮৮ শতাংশ ছাড় দিলেও আমাদের লাভ থাকবে।”
চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ বলেন, “ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে বিক্রি হওয়া ওষুধের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের পরিকাঠামো অত্যন্ত খারাপ।” বামপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর মুখপাত্র মানস গুমটার বলেন, “ওষুধের গুণমান যদি নিয়মিত যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকে, তা হলে মাত্রাতিরিক্ত ছাড় মিললে সন্দেহ আরও বাড়বে। তার উপর নিকট অতীতে একাধিক বার ন্যায্য মূল্যের দোকানে খারাপ মানের ওষুধ মিলেছে।” এদিকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম দাবি করেছেন যে, “ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের ওষুধ নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়।”