বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
Homeবিনোদনটলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ফের অচলাবস্থা, সমস্যার সমাধান খুঁজতে একত্রিত সকল পরিচালক

টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ফের অচলাবস্থা, সমস্যার সমাধান খুঁজতে একত্রিত সকল পরিচালক

নতুন বছরে পর পর তিন জন পরিচালক যথাক্রমে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায় ও শ্রীজিৎ রায় এর উপর পড়লো কোপ। এই মুহূর্তে আতঙ্কে রয়েছে সকল পরিচালক। একদিকে নতুন বছরে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা প্রযোজক-পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, নতুন সিনেমা আর সিরিজ পরিচালনা শুরু করতে চাইলে হঠাৎ করেই ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা জানিয়ে শুটিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। অপরদিকে, শ্রীজিৎ এর নতুন ধারাবাহিকের সেট তৈরির কাজ বিনা নোটিসে বন্ধ করে দেয় আর্টস সেটিং গিল্ড।

গত রবিবার সন্ধ্যায় জয়দীপকে ফেডারেশনের তরফ থেকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং পরিচালকের তরফে নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা সংগঠনের অফিসে গেলেও কেউই তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। জয়দীপ বলেন যে, তিনি মঙ্গলবার দুপুরে ফোন করলে ফেডারেশনের তরফে জানানো হয় যে, এখনো তাদের আলোচনা চলছে। এবার এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে শ্রীজিতের ডাকে সাড়া দিয়ে গত সোমবার সকালে ডিরেক্টর্স গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়, সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচাৰ্য-সহ গিল্ড-এর পরিচালক সদস্য উপস্থিত হন। একে একে সকলেই তাদের ক্ষোভ উগড়ে দেন।

রাজ চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্ট্রাইকের ঘোর বিরোধী। তাঁকে অমান্য করার সাহস দেখাচ্ছেন কারা?’’ গিল্ড-এর সভাপতি সুব্রত বলেন, “টেকনিশিয়ান ভাইদের কে বা কারা বোঝাচ্ছেন, আমরা নাকি আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ভীষণ ভুল বার্তা ছড়ানো হয়েছে। পরিচালক সংগঠন যদি প্রতিবাদ জানিয়ে থাকে, তাহলে তা পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে প্রথম যখন ফেডারেশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তখন। যারা আরজি কর- কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা মানবিকতার খাতিরে পথে নেমেছিলেন।” পরিচালক রঞ্জন ঘোষ বলেন, “টেকনিশিয়ানদের এও বোঝানো হচ্ছে, আমরা হয় বামপন্থী নয় পদ্ম শিবিরের। অর্থাৎ, আমরা শাসকদলবিরোধী। যা একে বারেই নয়। বরং কাজের দুনিয়ায় আমরা রাজনীতি আনতেই চাই না।”

জানিয়ে রাখি, গত বছর জুলাই মাস থেকে পরিচালকদের সঙ্গে ফেডারেশনের দ্বন্দ্ব শুরু। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের অভিযোগ, পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় সংগঠনকে না জানিয়ে বাংলাদেশে কাজ করেছিলেন, যা নিয়মবিরুদ্ধ। সেই কারণে সেই সময় তাকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন সকল পরিচালক একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে বিরোধ সাময়িক স্তিমিত হয়েছিল। এরপর বিষয়টির সমাধান খুঁজতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচালক গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ-অভিনেতা দেব একটি বৈঠক করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তখন ওই তিন জনকে নিয়ে একটি কমিটি গড়েন। উল্লেখ্য, ওই কমিটিতে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেনও ছিলেন। কমিটি গড়ার তিন মাসের মধ্যে সমাধান খোঁজার কথা বলা হলেও গত সোমবার গিল্ড-এর তরফ থেকে অভিযোগ জানানো হয় যে, ওই কমিটির কাছে মেল পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি। এদিকে টলিউডে চলতে থাকে যৌন হেনস্থার বিষয়ে ফেডারেশন সভাপতি দাবি করেন, পরিচালকদের ৬০ শতাংশ এই ধরনের নিন্দনীয় আচরণ করে থাকেন।

ফেডারেশন সভাপতির এই কথায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সকল পরিচালক এবং ফেডারেশন সভাপতির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন তারা। পরমব্রত বলেন, তিনি এই ইন্ডাস্ট্রিতে ৩৪ বছর ধরে প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা হিসেবে কাজ করছেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তাকে ইন্ডাস্ট্রি সম্বন্ধে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে বলে জানান তিনি। সুদেষ্ণার কথায়, “আমরা চাইছি, সমাধান হোক। মুখোমুখি বসে আলোচনায় সমস্যা মিটুক। এও চাইছি, আর এক বার গৌতমদা, প্রসেনজিৎ, দেব এগিয়ে আসুন। দায়িত্ব নিন। আমরা আগের মতো এক পরিবার হয়ে কাজ করতে চাই।”

এইদিন কৌশিক অনুপস্থিত ছিলেন। জয়দীপ, শ্রীজিৎ উভয়েই জানিয়েছেন যে, “যদি তাদের দোষ প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই বিষয়টি বিবেচিত হবে। কেউ কোনো দোষ দেখাতে পারেননি। কারণ, আমরা জ্ঞানত কোনো টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করিনি। টেকনিশিয়ানদেরও বুঝতে হবে, ক্রমাগত কাজ বন্ধ মানে তাদেরও উপার্জন বন্ধ। পরিচালকদের পাশাপাশি তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।” জয়দীপ, শ্রীজিৎ অনুরোধ জানান যে, “সবাই কাজে ফিরুন। বাংলা বিনোদন দুনিয়া সমৃদ্ধ হোক। কাজ বন্ধ করে দেওয়া সমাধান নয়। ইন্ডাস্ট্রি এ ভাবে চললে আগামীতে কোনও বিনিয়োগকারী বা প্রযোজক এখানে লগ্নি করতে আসবেন না।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments