বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
Homeবিদেশক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশ, নিহত ১৯, কোর্ট জানালো সংরক্ষণ মামলা শুনানির দিনক্ষণ

ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশ, নিহত ১৯, কোর্ট জানালো সংরক্ষণ মামলা শুনানির দিনক্ষণ

বাংলাদেশে বাড়ছে বিক্ষোভ। গোটা বাংলাদেশ জুড়ে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলন। দফায় দফায় পুলিশ এবং আওয়ামী লিগের নেতা, কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সংঘর্ষ চলছে। আন্দোলনের জেরে গত বৃহস্পতিবার দিনভর ঢাকা সহ দেশের নানা প্রান্ত উত্তপ্ত থেকেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চলছে গুলিবর্ষন। সংঘর্ষে কয়েক জন পুলিশকর্মী হয়েছেন জখম। দিকে দিকে চলছে ভাঙচুর এবং ঘটছে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। বাংলাদেশের এই হিংসাত্মক পরিস্থিতিতে আহত শতাধিক। গোটা দেশজুড়ে চলা এই সংঘর্ষে গুলির আঘাত, ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত ১৯ জন, যার মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানী ঢাকাতে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই অনূর্ধ্ব ৩০ এর পড়ুয়া। শেখ হাসিনা সরকার বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সরকার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নীতিগত ভাবে সহমত। এমনকি দেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের আদালতে সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলাটি উঠেছিল। বাংলাদেশের চেম্বার আদালত, আগামী রবিবার সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে।

গত কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভের জেরে অশান্ত বাংলাদেশে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে এবং এর পাশাপাশি ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছে এই বিক্ষোভের জেরে। ঢাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। গোটা দেশ জুড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থাবন্ধ করা হয়েছে, তবে ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি, বিভিন্ন অংশে ধীর গতিতে তা চলছে। বিরোধী নেতৃত্ব, বাংলাদেশের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারের নীতির বিরোধিতা করে এবং পুলিশের আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।

অপরদিকে বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লিগের অভিযোগ, বিএনপি-জামাত, পড়ুয়াদের আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে, যার ফলে এই আন্দোলন আর শুধুমাত্র ছাত্র আন্দোলনের পর্যায়ে নেই। দেশের সড়ক পরিবহণ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শাসকদলের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালেও দেশটি সংরক্ষণের নিয়ম নিয়ে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সে দেশে মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল এবং ৪৪ শতাংশ আসন নির্ধারিত ছিল সাধারণের জন্য।

আবার এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮ সালে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দিয়েছিলেন। শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ রাখা হয়েছিল। ছাত্রেরা তখন আন্দোলনে ইতি টানলেও পরে সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

গত ৫ই জুন হাইকোর্ট হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ বলে রায় দেয়। আর এই নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ হলো ফের আগের সংরক্ষণ নিয়ম ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ছাত্ররা ফের আন্দোলনে নামেন। তাদের দাবি, স্থায়ী ভাবে সরকারি নিয়োগ থেকে সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। হাসিনা সরকার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। রবিবার সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments