পরিবারের সকলেই উচ্চশিক্ষিত। সংসারে সেইভাবে কোন অর্থের অভাব ছিল না। পরিবারের কর্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে। ছেলেও একটি নির্মাণ সংস্থায় চাকরি করতেন। কিন্তু পরিবারের বৃদ্ধ কর্তার মৃত্যু বাকি সদস্যদের জীবন সম্পন্নভাবে পাল্টে দেয়।
পরিবারের কর্তার মৃত্যুর পর পরিবারের সকলেই স্বেচ্ছা বন্দী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় কুড়ি দিন হুগলির উত্তরপাড়ার রাজেন্দ্র এভিনিউর গগনভিলার ওই পরিবারের তিন সদস্য ছিলেন স্বেচ্ছাবন্দী অবস্থায়। গত সোমবার বাড়ির দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় তাদের। বর্তমানে ওই তিনজনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও ছেলে এবং মেয়ের শারীরিক পরিস্থিতি ভীষণ সংকটজনক।
গত চৌঠা ফেব্রুয়ারি অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় চাকুরে গগন বরণ মুখোপাধ্যায় মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। ছেলে সৌরভ মুখোপাধ্যায় বাবার চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করেছিলেন যথা সম্ভব কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাবার মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি পরিবারের কেউ। তিনজনেই সিদ্ধান্ত নেন স্বেচ্ছা বন্দী হবেন তারা।
গগন বাবুর মেয়ে চুমকি এমএ পাস করা মহিলা। স্ত্রী শ্যামলী মুখোপাধ্যায় বয়স জনিত অসুখে আক্রান্ত। প্রতিবেশীরা গগন বাবু মারা যাওয়ার দিন দুয়েক পর্যন্ত ছেলেকে বাড়ির বাইরে দেখেছিলেন কিন্তু পরিবারের আর অন্য কোন সদস্যকে দেখা যায়নি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতে। এরপর ছেলে কেউ আর দেখা যায় না। প্রতিবেশীরা খোঁজ নিতে ব্যর্থ হন।
এর মধ্যেই এক আত্মীয় ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মৃত গগন বাবুর ছেলে জানান, তারা সবাই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। এরপরই আগুনের মতো খবরটা ছড়িয়ে যায় চারিদিকে। স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে পুরপ্রধান চলে আসেন বাড়ির সামনে। পুলিশ বাড়ির দরজা ভেঙে অসুস্থ অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।
হাসপাতালের শয্যায় বসে গগন বাবুর স্ত্রী শ্যামলী দেবী জানান, কুড়ি দিন তাদের সঙ্গে কারোর যোগাযোগ ছিল না। প্রতিবেশীরা কেউ খোঁজ খবর রাখেন নি। যা খাবার ছিল তা কোনোভাবেই খেয়ে দিন যাপন করেছেন তারা। তবে শেষ কয়েকদিন কিভাবে কেটেছে, তা কিছুতেই মনে করতে পারছেন না তিনি। এই ঘটনা থেকে বেশ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, গগন বাবুর মৃত্যুর ঘটনা মানসিকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা পরিবারকে। আপাতত মানসিকভাবেই অবসাদগ্রস্ত পরিবারের তিন সদস্যই।