শনিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৪
Homeবিদেশউত্তাল পড়শী দেশ! এবার পড়ুয়াদের ফেরার পালা, সেখানে এত ছাত্রছাত্রী কী কারণে...

উত্তাল পড়শী দেশ! এবার পড়ুয়াদের ফেরার পালা, সেখানে এত ছাত্রছাত্রী কী কারণে পড়তে যান? জানুন

বর্তমানে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে চলছে হৈ হৈ রই কান্ড। উত্তাল বাংলাদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার পড়ুয়া ভারতে ফিরেছেন। সীমান্তে অপেক্ষা করছেন আরও অনেকে, আবার কেউ কেউ আতঙ্কে আটকে রয়েছে সেই দেশের হস্টেলে। যারা ভারতে ফিরতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই বাঙালি। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিহার, ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা, আবার উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যের বাসিন্দারাও ফিরেছেন প্রতিবেশী দেশ থেকে। এছাড়াও নেপাল, ভুটান, মায়ানমারের কম সংখ্যক পড়ুয়াও রয়েছে বাংলাদেশে আটকে। বেশিরভাগ পড়ুয়া এমবিবিএস পড়তে বাংলাদেশে গেছিলেন। কারো চূড়ান্ত বর্ষ, তো কেউ কেউ আবার সদ্যই ভর্তি হয়েছেন মেডিক্যাল কলেজে। বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন। কলকাতা শহরেও আসেন এমন অনেক রোগী, কিন্তু চিকিৎসক হওয়ার জন্য ডিগ্রির প্রয়োজনে কেনো বাংলার ছেলেমেয়েরা যান বাংলাদেশে আসুন জেনে নেওয়া যাক।

বাজিতপুরের জরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের বাসিন্দা সৌম্যদীপ চক্রবর্তীই জানান, তার চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন। এমনকি তার বেসরকারি কলেজে পড়ার মতো সামর্থ্য ছিল না, কারণ ভারতে যেকোনো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে গেলে ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়। আবার কোথাও কোথাও এক কোটি টাকাও লেগে যায়। তাই অনেকটা কম খরচে বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ মিলে যায়। এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের কুমিল্যা ময়নামতী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী বীরভূমের নলহাটির মেয়ে তমন্না পরভিনের বাবা বলেন, ‘‘ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল আমার মেয়ে। কিন্তু সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ না-মেলায় খুব চিন্তা হয়েছিল। বেসরকারি কলেজে আমার কাছ থেকে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা চায়। শেষে অনেক কম খরচে বাংলাদেশের এই কলেজে ভর্তি করিয়েছি।’’

আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, শুধু খরচই নয়, বাঙালি পড়ুয়াদের বাংলাদেশে আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে ভাষার সুবিধা। এমনকি, খাওয়াদাওয়ার সমস্যাও কম বাংলাদেশে। আবার বাড়িতে আসা-যাওয়ার খরচও একেবারেই কম। তবে, বিদেশ থেকে এমবিবিএস পাশ করে এলেই ভারতে চিকিৎসক হওয়ার ছাড়পত্র পাওয়া যায় না। এর জন্য ভারতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের নেওয়া ‘ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট এগ্জামিনেশন’ পাশ করতে হয়, যা অনেকেই পারেন না। সেই পরীক্ষা বেশ কঠিন, আর পাশের হারও খুব কম। তবুও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বিদেশে টেনে নিয়ে যায় শিক্ষার্থীদের।

কলকাতায় বিদেশে লেখাপড়া করতে যাওয়ার এজেন্সিতে কর্মরত শৌভিক হালদার বলেন, ‘‘এখানে যদি কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে বাংলাদেশে পাঁচ বছরে খরচ খুব বেশি হলে ৪০ লাখ টাকা। এটা টিউশন ফি। প্রতিটি সেমেস্টার অনুযায়ী খেপে খেপে টাকা জমা করতে হয়। এর বাইরে হস্টেল এবং খাওয়া দাওয়া খরচ। বাংলাদেশে মোট সরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ৩৭টি। সেগুলিতে মূলত সে দেশের পড়ুয়ারাই সুযোগ পান। আর বেসরকারি কলেজ এখন ৭০-এর আশপাশে। সে দেশের সেনাবাহিনীও সাতটি মেডিক্যাল কলেজ চালায়। ঢাকা শহরে বা তার আশপাশের কলেজগুলিতে খরচ একটু বেশি। সেখানেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পড়ুয়া যান। গুজরাত থেকে কর্নাটক— সব জায়গার ছেলেমেয়ে পাবেন। তবে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লার দিকের কলেজগুলিতে লেখাপড়া তুলনায় কম খরচে হয়। বাংলা তো বটেই, অসম, ত্রিপুরার ছেলেমেয়েরাও ওই সব কলেজে ভর্তি হন।’’ কলকাতায় শিক্ষাঋণ প্রদানকারী সংস্থায় কর্মরত কৌশিক মিত্রের বক্তব্য, ‘‘এখন পেশা হিসাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রই বেশির ভাগ পরিবারের পছন্দ। আমাদের কাছে যাঁরা ঋণ নিতে আসেন তাঁদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত, কিন্তু সকলেই চান ছেলেমেয়ে চিকিৎসক হোক। তারা চড়া সুদেই ঋণ নেন।’’

ভারতে সব মিলিয়ে মেডিক্যালের আসন সংখ্যা ৮৮ হাজারের মতো। কিন্তু দেশে ডাক্তারি পড়তে চাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। ভারতে সাড়ে ৫০০-র বেশি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ভাল ফল করার পর ভারতে সকল ছাত্রছাত্রীরা ২৮৯টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পান, আর বাকিদের পড়তে হয় বেসরকারি কলেজে, যার খরচ বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ছোটেন কম খরচে বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments