কেন্দ্রীয় সংস্থা গত ২১শে মার্চ দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করে। এর আগে এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেজরীকে নয় বার সমন পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি প্রতি বারই হাজিরা দেওয়া এড়িয়েছেন। গত ২১শে মার্চ ছিল নবম বারের হাজিরার দিন। ইডি দফতরে না গিয়ে কেজরী সে দিন গিয়েছিলেন হাই কোর্টে। রক্ষাকবচের আবেদন জানিয়েছিলেন, কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। আর তারপর ওই দিন রাতেই দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকেরা। ঘণ্টা দুয়েক তল্লাশির পর কেজরীকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার ১লা এপ্রিল ইডি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে হাজির করানো হয়।
আদালত, কেজরীওয়ালকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত তিহাড় জেলেই থাকতে হবে কেজরীওয়ালকে। এর আগে ২০১১ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় অণ্ণা হাজারের সঙ্গে কেজরীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিছু সময় তিহাড়ে কেটেছিল তাঁর। ফের এক দশকেরও বেশি সময় পর তিহাড় জেলে ঢুকতে হয়েছে আপ প্রধানকে। সোমবার ১লা এপ্রিল বিকেলে তিনি তিহাড়ে প্রবেশ করেছেন। সেখানে দুই নম্বর সেলে রাখা হয়েছে তাঁকে। সূত্র মারফৎ জানা গেছে যে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, তিহাড়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। ধ্যান এবং যোগব্যায়াম করে তাঁর সকাল কেটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম রাত একেবারেই ভালো কাটেনি তাঁর। তিহাড়ের কক্ষে কেজরীওয়ালকে একটি গদি, একটি কম্বল এবং দুইটি বালিশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাতে কিছু ক্ষণ মাত্র সিমেন্টের বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। গভীর রাতে তাঁকে কক্ষের মধ্যে পায়চারি দেখা যায় বলে জানা গেছে। ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, আপ প্রধানের শরীরে শর্করার মাত্রা ৫০-এর নীচে নেমে গেছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়। তাঁকে বিকেলে চা এবং রাতে বাড়ির তৈরি খাবার দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার ভোরবেলা তাঁকে চা এবং বিস্কুট খেতে দেওয়া হয়েছিল। প্রাতরাশের আগে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধ্যান করেন তিনি। এমনকি বেশি কিছুক্ষণ তিনি যোগব্যায়ামও করেন। এরপর দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁকে বাড়িতে তৈরি খাবার দেওয়া হয়। জানা গেছে যে, মঙ্গলবার সকালেও তাঁর সুগার টেস্ট করানো হয়। তখনও তাঁর শরীরে শর্করার মাত্রা কমই ছিল। তিনি জেলের চিকিৎসকদের নজরদারিতে রয়েছেন।
দুপুরে এবং রাতে বাড়ির তৈরি খাবার খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। যতক্ষণ না তাঁর শরীরে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তাঁকে বাড়ির খাবার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বিকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ তাঁকে দেওয়া হবে নৈশভোজ। এরপর ৭টার মধ্যে আবার তাঁকে ফিরে যেতে হবে কারাগারের কক্ষে। বাকি কয়েদিদের মতো তিনিও সকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টিভি দেখতে পারবেন। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কেজরীওয়ালের স্ত্রী এবং সন্তান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তিহাড়ে কেজরীওয়ালের কক্ষের বাইরে দুইজন নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষ, তাঁর উপর সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও নজর রাখছেন। জানা গেছে যে, কেজরীওয়ালের পাশের সেলে রয়েছেন তাঁর মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য মণীশ সিসৌদিয়া। তিনিও আবগারি মামলাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
এমনকি, দিল্লির প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন রয়েছেন সাত নম্বর সেলে, আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ রয়েছেন পাঁচ নম্বর সেলে এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেত্রী তথা তেলঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-এর কন্যা কে কবিতা রয়েছেন তিহাড়ের মহিলা বিভাগের ছয় নম্বর সেলে।