তিরিশ বছর বয়স অনেকের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রতিটি ব্যক্তির এই সময়ে ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পেশাগত, সামাজিক জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে, আর তার সঙ্গে আসে নানারকমের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন। এই সকল পরিবর্তনগুলি একসঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অনেকের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক পরিবর্তনগুলি ঠিক কেমন এবং কীভাবে সেই পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়া যায়?
কী ধরনের বদল আসে?
১) পেশাগত জীবনে পরিবর্তন: অনেকেরই তিরিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার কথা সাথে চাকরি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায় দায়িত্ব। পেশাগত জীবনে স্থির হওয়ার চাপও অনেকে অনুভব করেন। কারণ, এই সময়ে জীবনে অন্যান্য দায়িত্ব নেওয়ারও সময় আসে।
জীবনে আসতে থাকে নানা পরিবর্তন। সেই সব পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে বেশ বেগ পেতে হয় অনেককেই। কী ভাবে সামলাবেন এই নতুন অধ্যায়?
২) পারিবারিক পরিবর্তন: তিরিশের দোরগোড়ায় অনেকেই বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করার কথা ভাবেন। বিয়ের পর সন্তান হয় এবং সন্তানের নানা দায়িত্ব এসে পড়ে। আর বাবা এবং মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সহজ কাজ নয়। অনেকেই এই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েন। আর তার ওপর বাবা-মায়ের বয়স বাড়তে থাকে এবং তাদের বয়সজনিত নানা সমস্যা, রোগব্যাধি বাড়লে তাদের দেখভালের দায়িত্ব এসে পড়ে।
৩) সামাজিক জীবনে পরিবর্তন: একের পর এক দায়িত্বের চাপে ব্যক্তিগত জীবন খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তখন নিজের জন্য আর সময় বার করা অসম্ভব হয়ে ওঠেনা। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোরও খুব একটা সুযোগ পাওয়া যায় না। এতে জীবনে শূন্যতা এবং একাকিত্বের বোধ ক্রমশ বাড়ে।
৫) শারীরিক পরিবর্তন: তিরিশ বছরের পর থেকে শরীরেও নানা বয়সজনিত লক্ষণ দেখা দেয়। বিপাকের ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে, যার ফলে ওজনবৃদ্ধি, চুল পড়া, এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। আজকাল ত্রিশের কোঠায় বহু মানুষ সুগার, প্রেশার, কোলেস্টরলের সমস্যায় ভোগেন। অনেকে আবার বাতের সমস্যা বা ব্যথাজনিত সমস্যাতেও ভোগেন।
৬) মানসিক পরিবর্তন: ত্রিশের পর মানুষ নিজের সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব কষতে বসেন। তখনই হাজারো চিন্তায় মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়ার উপায় কী?
১) পরিবর্তন মেনে নেওয়া প্রয়োজন: জীবন মানেই পরিবর্তনশীল। তাই ত্রিশের পর আসা পরিবর্তনগুলিকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। সমস্ত পরিবর্তনগুলি গ্রহণ করে, ধীরে ধীরে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
২) নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন: এই সময় শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম একান্ত ভাবে প্রয়োজন। সারা দিনের নানা দায়িত্ব থেকে নিজের জন্য সময় বার করতে হবে। উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বই পড়া, ধ্যান, যোগাসন করা যেতে পারে।
৩) লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: জীবনের অর্থ প্রত্যেকের কাছে ভিন্ন। তাই নিজের জীবনের অর্থ বুঝে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
8) কাছের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো: সমস্যা ভাগ করে নিলে মনের ভার খানিক লাঘব হবে, এমনকি মিলতে পারে সমস্যার সমাধান। তাই সমবয়সি বন্ধু, যারা প্রায় একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো প্রয়োজন।
৫) শারীরিক পরীক্ষা: কোনো শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। তাতে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।