করোনা মহামারীর পর ফের ভারতে পাওয়া গেল হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস সংক্রমণের হদিস। এই ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে বেঙ্গালুরুর আট মাস ও তিন মাস বয়সি দুই শিশুর শরীরে। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে যে, চিনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে পাওয়া এইচএমপি ভাইরাসের সংক্রমণের কোনো যোগ নেই। তবে, ভারতে এই ভাইরাস সংক্রমণের খবরে উদ্বিগ্ন সকল অভিভাবক। এই ভাইরাস কোভিডের মতো প্রাণঘাতী কিনা এবং সদ্যোজাতদের এই ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি কিনা সেই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানান যে, ‘‘এইচএমপিভি ভাইরাস, কোভিডের মতো নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এই ভাইরাস আমাদের পূর্বপরিচিত। শীতকালে বিভিন্ন দেশেই যে সব ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে, এইচএমপিভি তাদের মধ্যে অন্যতম।”
“পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। সাধারণ সর্দি-কাশি হলে কিংবা ঠান্ডা লাগলে, কোনো না কোনো ভাইরাসের কারণেই হয়, কিন্তু তখন খুব বাড়াবাড়ি না হলে আমরা রোগটি কোন ভাইরাসের কারণে হয়েছে তা জানতে পরীক্ষা করাতে ছুটি না। প্রতি বছর শীত পড়লে এদেশে ভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ যে হারে বৃদ্ধি পায়, এই বছরও সেই হারেই বেড়েছে। চিনে এই ভাইরাস নিয়ে বেশ হইচই শুরু হয়েছে বটে, কোভিডের পর আমাদের দেশেও এখন সতর্কতা বেড়েছে। তবে এখনও এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো কারণ দেখছি না।’’
তিনি আরো বলেন যে, এইচএমপিভি, চার থেকে চোদ্দো বছর বয়সিদের মধ্যে বেশি ছড়ায়। এমনকি, কোনো ক্রনিক অসুখ থাকলে কিংবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ খানিকটা চিন্তার বিষয় হতে পারে। সদ্যোজাত শিশুরা স্তনদুগ্ধের মাধ্যমে তার মায়ের থেকে যে অ্যান্টিবডিগুলি পায় সেগুলি তাকে অনেক রোগের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই সদ্যোজাতদের উপর যেমন কোভিডেরও খুব বেশি প্রভাব চোখে পড়েনি, তেমনই এইচএমপিভি-র ক্ষেত্রেও অন্যদের তুলনায় তারা বেশি সুরক্ষিত। তবে, চার বছরের বেশি বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে যদি জ্বর, সর্দি-কাশি হয়, তবে তারা এই সময় যেন স্কুলে না যায়।
শিশুদের এই সময় পুল কার, বদ্ধ ক্লাসরুম কিংবা ভিড় বাস-মেট্রোয় মাস্ক পরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। যদি কোনো শিশুর থ্যালাসেমিয়া, ক্যানসারের মতো জটিল রোগ থাকে, তাহলে তার উপর এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিতে পারে। তাই তাদের বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। চিকিৎসক শুভম সাহা জানিয়েছেন যে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ কোভিডের মতো প্রাণঘাতী না হলেও শিশুদের ও খুব বয়স্কদের সাবধানে থাকা জরুরি। শিশুকে এই সংক্রমণ থেকে দূরে রাখার বিষয়ে চিকিৎসক জানান যে, যেকোনো সংক্রমণ মোকাবিলা করার উপায় হলো, পরিচ্ছন্নতা।
তাই এই সময় শিশুদের পরিচ্ছন্নতার পাঠ দিতে হবে। খাওয়ার আগে হাতে সাবান দিতে হবে, শুধুই যে ভাত খাওয়ার সময় নয়, একটা চকোলেট খেতে গেলেও দুই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। অযথা ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো যায় থেকে এসে সোজা বাথরুমে গিয়ে পোশাক বদলে হাত মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে তবে শিশুদের কাছে যেতে হবে। যে সকল বাচ্চার অ্যালার্জিজনিত হাঁচি, সর্দি লাগা কিংবা হাঁপানির প্রবণতা আছে, তাদের সাবধানে রাখতে হবে। এই ভাইরাস হাঁচি- কাশি মারফত ছড়ায়। তাই বাড়ির বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কারো সর্দিকাশি হলে তার কাছাকাছি না যাওয়া উচিত। সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।