আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ৪ঠা জুলাই থেকে ক্ষমতার পালাবদলের বার্তা ব্রিটেনে শুরু হল ভোটপর্ব। জনমত সমীক্ষার ফল যদি সত্যি হয়, তবে কিয়ের স্টার্মারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি এবার প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টির অর্থাৎ টোরির দ্বিগুণ ভোট এবং তিন গুণ আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল করবে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং জনমত সমীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে যে, লেবার পার্টি এবার চারশোর বেশি আসন পেয়ে ইতি টানতে চলেছে দীর্ঘ ১৪ বছরের কনজ়ারভেটিভ শাসনের। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় অর্থাৎ ভারতীয় সময় অনুযায়ী সকাল ১১টায় শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ পর্ব, চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। আর তারপরেই শুরু হবে ভোটগণনা। এরপর রাত ১২টায় প্রথম ফল প্রকাশিত হবে।
পরবর্তী ফল প্রকাশিত হবে বৃহস্পতিবার রাত ৩টে, শুক্রবার ভোর ৪টে, ভোর ৫টা এবং সকাল ৭টায়। সুতরাং, শুক্রবার সকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আগামী ৫ বছরের জন্য কে হতে চলেছেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় পূর্বাভাস মিলেছে যে, ৪৪ বছর বয়সি ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কনজারভেটিভরা খারাপ ফল করতে পারে। এমনকি সুনক, তার শক্ত ঘাঁটি অর্থাৎ নর্থ ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডে হারতেপারেন বলেও কয়েকটি সমীক্ষার ইঙ্গিত মিলেছে। জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, লেবার পার্টি পাবে ৪০ শতাংশ ভোট, টোরিরা পাবে ২০ শতাংশ ও নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী দল রিফর্ম ইউকে পাবে ১৬ শতাংশ ভোট। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির আসন এবার তিন গুণ বেড়ে ৪০ ছুঁতে পারে বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছে। এছাড়াও, লড়াইয়ে রয়েছে গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-সহ ছোট বড় প্রায় ৯৮টি রাজনৈতিক দল এবং নির্দলেরা।
ব্রিটেনে এবারের নির্বাচনে মোট ৪৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা গেছে। শেষবেলার প্রচারে সুনক, কনজারভেটিভ পার্টির অন্দরে তার ‘কট্টর সমালোচক’ হিসাবে পরিচিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে পাশে পেয়েছেন। গত বুধবার জনসন, লন্ডনে দলীয় প্রচারসভায় আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, লেবাররা ‘বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা’ পেয়ে গেলে ব্রিটেনের গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়বে। যদিও প্রাক্তন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেত্রী সুরেলা ব্রেভারম্যান, ভোটের আগেই কার্যত হার স্বীকার করে নিয়েছেন। একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতি রয়েছে ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী ক্ষোভ’। ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যা-সহ সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনের জনগণ বিরক্ত বলে জনমত সমীক্ষাগুলিতে মিলেছে ইঙ্গিত।
এর পাশাপাশি, বিগত পাঁচ বছর ধরে টোরিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, তিন বার প্রধানমন্ত্রী বদলের প্রভাবও ভোটের ওপর পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার অপরদিকে লেবারদের সমস্যা হলো স্টার্মার গাজা হামলায় ইজরায়েলকে সমর্থন করা এবং অভিবাসন বিরোধী কড়া অবস্থানের ফলে গত এক বছরে লেবার পার্টির সদস্যসংখ্যা কমেছে ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ দুই লক্ষের বেশি। এই সবদিক বিবেচনা করে কয়েকটি সমীক্ষার ইঙ্গিত মিলেছে যে, অভিবাসী ভোটের একটি অংশ ওয়ার্কার্স পার্টির দিকেও যেতে পারে।