গত শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরানের একটি ভিডিয়ো হুহু করে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে দেখা গেছিল, এক তরুণী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে শুধু অন্তর্বাস পরে হাঁটছেন। হিজাব থেকে শুরু করে পরনের পোশাকের অধিকাংশই তিনি খুলে ফেলেন। বিশেষ বিষয় হলো ওই ভিডিয়োটিতে অন্য যেসকল মহিলাদের দেখা গেছিল, তারা প্রত্যেকেই আপাদমস্তক হিজাব পরে ছিলেন। এরপর ওই তরুণীকে ইরানের পুলিশ গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০২২ সালে ইরানে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে ১৯ বছরের মাহশা আমিনির মৃত্যুতে গোটা ইরানে আগুন তোলপাড় শুরু হয়েছিল।
মাহশার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি হিজাব দিয়ে মাথার চুল পুরোপুরি না ঢাকায় নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ইরানের পোশাকবিধি না মানার কারণে আটক করেছিলেন। হেফাজতে থাকাকালীন তার মৃত্যু হয়। হেফাজতে থাকাকালীন অত্যাচার করে মাহশাকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। গোটা দেশ তার মৃত্যুর পর প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে। ইরানের মেয়েরা ওই সময় প্রকাশ্যে হিজাব পুড়িয়ে, মাথার চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ইরান সরকার কঠোর ভাবে সেই বিক্ষোভ দমন করেছিল। এখন বর্তমান ঘটনাটির বিরুদ্ধে গোটা দেশে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ওই তরুণীর মুক্তির দাবি উঠছে।
ইরানে আন্তর্জাতিক অসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি, ওই তরুণীর মুক্তির দাবি জানিয়ে, পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন ওই তরুণীর উপর যাতে কোনোরকম অত্যাচার না হয়, সেই বিষয়ে নিশ্চিত করতে বলেছে। তাদের বক্তব্য, ‘‘হেফাজতে তরুণীর উপর অত্যাচার এবং দুর্ব্যবহার যাতে না হয়, কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি যাতে নিজের পরিবার এবং আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে এবং সর্বোপরি, তরুণীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’’ অভিযোগ উঠে এসেছে যে, ওই তরুণীকে গ্রেফতারের সময়ে তাকে মারধর এবং তার উপর যৌন হেনস্থা করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি, সেই অভিযোগগুলিরও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। বর্তমানে এই গোটা পরিস্থিতির দিকে রাষ্ট্রপুঞ্জ নজর রাখছে।ইরানের রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি মাই সাটো, ওই তরুণীর অন্তর্বাস পরে হাঁটার ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছেন যে, ‘‘এই ঘটনাটির দিকে আমরা নজর রেখেছি। বিশেষত, ইরান সরকারের তরফে কী পদক্ষেপ করা হয়, কী বিবৃতি আসে, তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’ মনে করা হচ্ছে যে, ইরানের শরিয়ত আইন অনুযায়ী, সকল মহিলাদের যেহেতু হিজাব পরা বাধ্যতামূলক এবং এই নিয়ে গোটা দেশে রীতিমতো কড়াকড়ি রয়েছে, তাই এই কড়া পোশাকবিধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ওই তরুণী নিজের পরনের পোশাক খুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে হেঁটে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
যদিও প্রাথমিক ভাবে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন যে, ওই তরুণী মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই তাকে নিরাপত্তারক্ষীরা আটক করে নিয়ে গেছিল এবং এখন ওই তরুণীকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে, তবে পরবর্তীকালে জানা যায় যে, ইরান কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতার করেছেন এবং ওই তরুণীর হদিস মিলছে না। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ সহ সমগ্র বিশ্বে।