১২ই নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে সকলকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ৮৫ বছর বয়সী বর্ষীয়ান অভিনেতা মনোজ মিত্র। এর আগে বহু তাঁর মৃত্যুর ভুয়ো খবর রটেছে। এবারও তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র তাঁর সকল অভিনয় অনুরাগীরা প্রার্থনা করছিলেন যে, এবারের এই মৃত্যুর খবরটিও যেন ভুয়োই হয়, কিন্তু এবার আর খবরটা ভুয়ো নয়। এই কিংবদন্তী অভিনেতা প্রয়াত হলেন এবং মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেলেন, তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে মনোজ মত্রের কন্যা ময়ূরী মিত্র জানিয়েছিলেন যে, তাঁর বাবার হার্ট এক্কেবারেই কাজ করছে না। ওষুধের জোরেই তিনি চলছেন। সেই সময় ময়ূরী আরো জানিয়েছিলেন যে, তাঁরা মা ডিমেনশিয়ার রোগী, কথা বলতে পারেন না। খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। চলতি বছরের শুরুতেই মনোজ মিত্রের বুকে প্রেসমেকার বসেছিল বলে জানা গেছে। এরপর তিনি অবশ্য সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরেন। চলতি বছরের ২৩শে সেপ্টেম্বর মনোজ মিত্রকে, কলকাতারই এক বেসরকারি হাসপাতালেভর্তি করা হয়েছিল। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে বাড়ি ফেরেন পুজোর আগে।
চলতি বছরে প্রায় ৩ বার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তবে এবার আর বাড়ি ফেরা হল না অভিনেতার। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত সকলে। ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছিল যে, অভিনেতা ‘কার্ডিওজেনিক শক’-এ রয়েছেন। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ার রক্তচাপ খুবই কমে গেছিল। তাঁকে ‘নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন’ দেওয়া হয়েছিল, তবে অভিনেতাকে কতটা সুস্থ করে তোলা যাবে, সেই বিষয়ে ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিকের ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিমের চিকিৎসকরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
জানা যায় যে, তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের কঠিন অসুখে ভুগছিলেন, এর পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস মেলাইটাস, ক্রনিক কিডনির অসুখ, সিওপিডি, ডিমেনশিয়া প্রভৃতি রোগও তাঁর শরীরে জেঁকে বসেছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন যে, তাঁর হার্টের কার্যক্ষমতাও বেশ কম বলে। তাই সবরকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হলো না। উল্লেখ্য, ১৯৫৯ সালে মনোজ মিত্রের তাঁর প্রথম নাটক মৃত্যুর চোখে জল, তবে ১৯৭২ সালে চাঁকভাঙা মধু নাটকের মাধ্যমেই তিনি নাট্য জগতে পদার্পণ করেন। বাংলা সিনেমার তিনি তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে কুঁড়িয়েছিলেন দর্শকদের অগাধ ভালোবাসা। সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত, গৌতম ঘোষ প্রমুখ পরিচালকদের পরিচালনায় তিনি অভিনয় করে পেয়েছেন প্রশংসা।