আরজিকর কাণ্ডে গোটা রাজ্য তোলপাড়। চলছে বিক্ষোভ মিছিল। উঠছে একের পর এক দাবি এবং অভিযোগ। এইসবের মাঝখানেই একে একে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে লক্ষীর ভান্ডার এবং দুর্গার ভান্ডার। প্রতিবছরই প্রত্যেকটি ক্লাবের দুর্গা পুজোর সময় সরকারি তরফে বেশ অনেকটা টাকাই অনুদান দেওয়া হয়। যেখান থেকে পুজোর খরচ বেশ খানিকটাই উঠে আসে। তবে এবার এই দুর্গার ভান্ডার এর প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই বছর পুজোর অনুদান বৃদ্ধি করে ৮৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তবে আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অনেক ক্লাবই সেই অনুদান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই তালিকায় রয়েছে হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, দার্জিলিং, রাজ্যের নানা প্রান্তের বিভিন্ন ক্লাব। আর এবার সেই তালিকায় নাম লেখানো দক্ষিণেশ্বরের একটি ক্লাব। তারাও রাজ্য সরকারের দেওয়া পুজোর অনুদান ফিরিয়ে দিয়েছে। এই বছর দক্ষিণেশ্বর বিজয় সঙ্ঘের পুজো ২৩ বছরে পদার্পণ করেছে। এই ক্লাব বিগত দুই বছর ধরে রাজ্য সরকারের পুজো উপলক্ষে দেওয়া অনুদান গ্রহণ করেছে, তবে এই বছর আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সরকারের তরফ দেওয়া অনুদান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং পূজোর জাঁকজমক বর্জন করছেন। ক্লাবের তরফ থেকে স্থানীয় থানায় চিঠি দিয়ে সরকারের অনুদান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে।
ক্লাবের তরফ থেকে দক্ষিণেশ্বর থানায় একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, তারা সরকারি অনুদান গ্রহণ করবেন না। দক্ষিণেশ্বর পুলিশ সেই চিঠি গ্রহণ করেছে। দক্ষিণেশ্বর বিজয় সঙ্ঘ ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তা রনিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্লাবের তরফে আমরা সকলে মিলে স্থির করেছি, যত দিন না আরজি করের নির্যাতিতা বিচার পাচ্ছেন, তত দিন এই অনুদান আমরা নেব না। পুজো হবে, তবে তা হবে আড়ম্বরহীন। পুজো হবে, কিন্তু উৎসব নয়। পুজোয় আমাদের সমস্যা হবে না। ২৩ বছর ধরে পুজো চলছে। গত দুই বছর ধরে সরকারের অনুদান পেয়েছি। তার আগে নিজেরাই করেছি। এবারও সে ভাবেই পুজো হবে। সকলের ভালবাসা নিয়ে ছোট করে পুজো করবো। অন্য পুজো কমিটির উদ্দেশ্যেও এই আহ্বানই আমরা জানাচ্ছি। এখানে কোনো দল নেই। আমাদের বোন মারা গেছে। সারা পৃথিবী দেখছে। এটা আমাদের কলকাতার লজ্জা। কেউ সমালোচনা করবেন না।’’
দক্ষিণেশ্বরের ওই ক্লাবের সদস্য অনুপ ঘোষাল বলেন, ‘‘এ বছর অনুদানের পরিমাণ বেড়েছিল। সরকারি টাকা পেলে আমাদের সুবিধা হত। বিজ্ঞাপন ছাড়া আমরা নিজেদের সামর্থ্যে পুজো করি। উৎসব করব, না শাস্ত্র মেনে পুজো করব, এটা আমরাই ঠিক করব। কেউ বলে দেবে না আমাদের। আমাদের মন চাইছে না। এখানে কোনও রাজনীতির ব্যাপার নেই। অন্যান্য বছর এই সময় আমাদের প্যান্ডেল হয়ে যায়। আরজি করে যে বর্বরতা হয়েছে, তা বিরলের মধ্যে বিরলতম। তার বিচার যত দিন না পাচ্ছি, তত দিন উৎসবে শামিল হতে পারছি না।’’