আরজিকর কাণ্ডে গোটা রাজ্য তথা দেশ উত্তাল। চারিদিকে বিক্ষোভ এবং মিছিলের পাশাপাশি চলছে জোরদার সিবিআই তদন্ত। এখন একটি প্রশ্ন সামনে উঠে আসছে যেটি হলো, ওই তরুণী চিকিৎসককে কি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেস্ট বিভাগের সেমিনার হলেই ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল, না কি অন্যত্র ঘটনা ঘটিয়ে সেমিনার হলে মৃতদেহ সাজিয়ে রাখা হয়েছিল? এই প্রশ্ন নিয়েই ধন্দে রয়েছেন সিবিআই তদন্তকারী দল। এর পাশাপাশি আরও একটি বিষয় মনে করা হচ্ছে যে, এই হত্যাকাণ্ডে কেবল একটি নয় একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন যে, আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট বিভাগে ৬০টি শয্যা রয়েছে। এর পাশাপাশি সেমিনার হল-সহ আরো দুটি ঘর রয়েছে, যেখানকার শয্যাগুলি রাতে সাধারণত খালি পড়ে থাকে। আর সেখানেও খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে। আর এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য চেস্ট বিভাগের নানা জায়গায় থ্রিডি স্ক্যানারের মাধ্যমে ম্যাপিং এবং ভিডিয়ো করা হয়েছে।
জরুরি বিভাগ-সহ তিনতলা পর্যন্ত ভাঙচুরের ম্যাপিং ও ভিডিয়ো সংগ্রহ করেছে সিবিআই। জানা গেছে যে, সিবিআই আজ অর্থাৎ সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আরজি করে ভাঙচুরের অনুসন্ধান রিপোর্ট জমা দেবে। সিবিআই ঘটনাস্থল ও সংলগ্ন জায়গা জরিপ করার পাশাপাশি শুক্রবার থেকে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। রবিবারও বেলা সাড়ে ১০টায় সন্দীপ, তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত চলে জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্তকারীদের মতে, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে কার কার সঙ্গে সন্দীপের কথা হয়েছিল, তা বার করতে গিয়ে জানা যায় সন্দীপের ফোনের কিছু কল রেকর্ড, কন্ট্যাক্ট নাম ও নম্বর মোছা হয়েছে। তাদের নাম এবং নম্বর লুকোনোর চেষ্টা করা হয়েছে তা জানতে সিবিআই-এর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সন্দীপের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করছেন বলেও জানা গেছে।
সিবিআই, হাসপাতালে সন্দীপের অফিসের ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারও খতিয়ে দেখবে। দরকারে তা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হতে পারে বলেও জানা গেছে। চেস্ট বিভাগের প্রধান ও অন্য আধিকারিকদের মোবাইল ফোনের নথি সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও রয়েছে খবর। সিবিআই জানার চেষ্টা করছে কে, নিহত ওই চিকিৎসক কোনও চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন কি না। ওই চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ চার সহপাঠীকেও এই দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তবে তেমন কোনো তথ্য মেলেনি বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারী দল। সিবিআই, ধৃত সঞ্জয় রায়ের থেকে কথা বার করার জন্য মনস্তত্ত্ববিদের সাহায্য নিতে পারে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য রবিবার নির্যাতিতার মা, বাবাও বলেন যে, তারাও মনে করছেন তাদের মেয়ে অন্যত্র খুন হয়েছেন।
তাদের বক্তব্য, ‘‘শুনছি, যে ভাবে মেয়ের দেহ দেখানো হয়েছে, সে ভাবে দেহ ছিল না। শরীরে পোশাক ছিল না। মেয়েকে দেখতে দিতে যে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করানো হয়েছিল, সেই সময়ে আমাদের আড়াল করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হয়েছিল।’’ তাদের প্রশ্ন, ‘‘কিছু আড়াল করার মতলব ছাড়া কেন আমাদের মেয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখেও ফোনে বলা হবে, ও আত্মহত্যা করেছে?’’