মঙ্গলবার, অক্টোবর ৮, ২০২৪
Homeদেশছেলের দেহ কাঁধে নিয়ে মালদহের গ্রামে ফিরলেন বাবা

ছেলের দেহ কাঁধে নিয়ে মালদহের গ্রামে ফিরলেন বাবা

সংসারের অভাব মেটানোর জন্য বড় ছেলেকে নিয়ে মিজোরামে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ বাবা। সদ্য উনিশে পদার্পণ করা সেই ছেলেকে নিয়েই বাড়ি ফিরতে হল বাবাকে, তবে মৃত অবস্থায়। সেতু বিপর্যয়ের মাত্র তিন দিন পর শনিবার শাহিন আক্তারের দেহ বাড়ি ফিরতেই কান্নার শব্দে ভারী হয়ে গেল পরিবেশ। ছেলের দেহ বাড়িতে নিয়ে আসার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা তোফিক শেখ। ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলেন, “চোখের সামনে ছেলেটা মরে গেল কিছু করতে পারলাম না”।

কিছুদিন আগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছিল শাহীন। ভালো নম্বর পাওয়ার কারণে চেয়েছিল নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে। টাকার প্রয়োজনে পড়াশোনার খরচ যোগাড় করার জন্যই বাবার সঙ্গে মিজোরামে গিয়েছিলেন তিনি। মিজোরামে নির্মীয়মান রেল সেতু ভেঙে সেদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শাহীন।

কফিনবন্দি ছেলের পাশে বসে বাবা সমানে বলে যান, “আরো বেশি পড়াশোনা করতে চেয়েছিল ও। আমার অত ক্ষমতা ছিল না বলে আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম। কেন যে নিয়ে গেলাম। আমার সব শেষ হয়ে গেল”।

পরিবার সূত্রে খবর, কোন বার বাবার সঙ্গে না গেলেও এবার শাহিন নিজেই বাবার সঙ্গে যেতে চেয়েছিল। সংসারের কথা ভেবেই হয়তো বাবার সঙ্গে কাজে যেতে চেয়েছিল সে। বাবা রেল সেতুর নিচে কাজ করতেন এবং শাহিন কাজ করতেন সেতুর ওপরে। বুধবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ একেবারে চোখের সামনে সেতু ভেঙে ছেলেকে উপর থেকে পড়ে যেতে দেখলেন এক অসহায় বৃদ্ধ।

রেল সূত্রে খবর, শুধুমাত্র মালদাহের ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, মিজোরামের ওই ঘটনায়। ঘটনার দিন ১৮ জনের দেহ শনাক্ত করা গিয়েছিল। ভিন রাজ্যে গিয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু নতুন কোন ঘটনা নয়। কখনো বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, কখনো নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে গিয়ে বিদেশে মৃত্যু হয়েছে শ্রমিকদের। কিন্তু তাও বছরের পর বছর শুধুমাত্র অর্থের টানে বিদেশে যেতে হয়েছে শ্রমিকদের। পশ্চিমবঙ্গের বেহাল দশা আরো একবার স্পষ্ট হয়ে যায় এই শ্রমিকদের হাহাকারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments