জালিয়াতির খবর তো প্রায়শই শোনা যায়। তবে, এবার প্রকাশ্যে এলো প্রেম জানিয়াতির খবর। এবার প্রেমের ফাঁদে নিঃস্ব হলেন ৬৭ বছর বয়সী এক প্রেমিকা। চরম বিপদে পাশে থেকেছেন প্রেমিকের। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়েছেন অর্থ প্রেমিকের সাহায্যার্থে,কিন্তু শেষে সাত বছর পরে জানতে পারলেন সেই প্রেমিকের পরিচয় ভুয়ো। প্রায় ৪ কোটি টাকা প্রতারণার শিকার হয়ে শেষমেশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন সেই প্রেমিকা বৃদ্ধা। এই ঘটনাটি ঘটেছে মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরে। মালয়েশিয়ার তদন্তকারী সংস্থা বুকিত আমান বাণিজ্যিক অপরাধ তদন্ত বিভাগ বর্তমানে ওই অভিযুক্তের খোঁজ শুরু করেছে।
সম্প্রতি এই প্রতারণার মামলাটির কথা প্রকাশ্যে এনেছেন মালয়েশিয়ার তদন্তকারী সংস্থার ডিরেক্টর দাতুক সেরি রামলি মোহাম্মদ ইউসুফ। জানা যায় যে, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ ফেসবুকে এক আমেরিকান শিল্পপতির সঙ্গে ওই বৃদ্ধার আলাপ হয়। শিল্পপতি যুবকের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছিল ওই বৃদ্ধার কাছে। এরপর তার প্রোফাইল দেখে বৃদ্ধা ওই যুবকটির বন্ধুত্ব গ্রহণ করেন এবং তাদের মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়। এরপর বৃদ্ধা জানতে পারেন যে, ওই আমেরিকান যুবকটি একজন বড় শিল্পপতি এবং বিভিন্ন দেশে তার ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে। এরপর তাদের বন্ধুত্ব গভীর হয়। একদিন হঠাৎই সেই শিল্পপতি, অনলাইনে প্রেম নিবেদনও করে বসেন ওই বৃদ্ধাকে।
এরপর ওই ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধা প্রেমে পড়ে যান যুবকের এবং তার প্রেমের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ভালই চলছিল তাদের প্রেম পর্ব। এরপর হঠাৎ একদিন বৃদ্ধাকে তার আমেরিকান প্রেমিক জানান যে, একটি জায়গায় ট্রান্সপোর্ট ফি দিতে গিয়ে তিনি সমস্যায় পড়েছেন। তাই তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মালয়েশিয়ার মুদ্রা ৫০০ রিঙ্গিত পাঠিয়ে দিতে বলেন প্রেমিকাকে। এক মাস ধরে চলা প্রেম পর্বে সেই প্রথম বার প্রেমিককে অর্থ ধার দেন বৃদ্ধা প্রেমিকা। এইভাবে বছরের পর বছর নানা জায়গায় ব্যবসায়িক সমস্যার কথা জানিয়ে প্রেমিকার থেকে অর্থ নেন ওই আমেরিকান প্রেমিক। তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, দীর্ঘ সাত বছরের প্রেমের সম্পর্কে তারা কখনো কেউ কাউকে দেখেননি।
যুবকের ফেসবুক প্রোফাইলে অন্য ছবি ছিল। শুধুমাত্র মেসেজ এবং ফোন কথাবার্তা হত। কখনো ভিডিয়ো কলে কথা হয়নি তাদের। জানা গেছে যে, ৫০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ওই যুবকের। আর তার এক একটি অ্যাকাউন্টে এক এক সময়ে টাকা পাঠিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। এই ভাবে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় চার কোটি টাকা ধার দিয়েছেন প্রেমিককে। জানা যায় যে, প্রেমিককে সব মিলিয়ে মোট ৩০৬ বার অর্থ পাঠিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। তিনি তদন্তকারীদের জানান, তার প্রেমিককে অর্থ দেওয়ার জন্য তিনি তার আত্মীয়স্বজনের কাছে ধার করেছেন। এমনকি ব্যাঙ্ক থেকেও ঋণ নিয়েছেন, কিন্তু ৬৭ বছর বয়সে এসে বুঝেছেন, তিনি প্রতারিত হচ্ছেন। তাই শেষপর্যন্ত তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিকে তদন্তকারীরা জানান যে, প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য থেকে মনে করা হচ্ছে যে, তিনি আগাগোড়াই প্রতারক এবং ওই বৃদ্ধাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বছরের পর বছর অর্থ নিয়েছেন তিনি।