এখনো নববর্ষ আসেনি তারই মধ্যে সকাল দশটায় বাড়ি থেকে বেরোলেই যেন মনে হচ্ছে, সূর্য আমাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে রয়েছে। এই দহনজ্বালা থেকে মুক্তি এখনই পাবার কোন উপায় নেই বলেই মনে করছেন আবহাওয়া দপ্তর। এই অসহ্য গরমে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে কিন্তু বাড়ি থেকে না বেরোলে পেশাগত দিক সামলানো যাবে না তাই বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছেই মানুষজনকেই। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী সমস্যা-হিট স্ট্রোক।
এই প্রবল রোদ্দুরে পথে ঘাটে অনেকেই হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন কেউ আবার অসম্ভব দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। কারুর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বমি বমি ভাব, কারণ আবার শরীরে অস্বস্তি হচ্ছে। এই হিটস্ট্রোক এখন প্রায় প্রত্যেক মানুষের হচ্ছে প্রবল রোদ্দুরের জন্য। এই বিষয়ে নিয়ে আমাদের জ্ঞান এতটাই কম যে কারোর যদি কোন সমস্যা হয় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে মৃত্যু হয়ে যায়। চলুন আজ এই অসুস্থতা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু আলোচনা করে নেওয়া যাক।
হিটস্ট্রোক আক্রান্তকে কিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়?
চিকিৎসকদের মতে, সঠিক চিকিৎসা যদি না হয় তাহলে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যু হয় আক্রান্তদের। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা কিভাবে করা সম্ভব তা আগে জেনে নেওয়া যাক। কেউ যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, তাকে সবার আগে জল খাওয়াতে হয়, যেটা একেবারেই উচিত নয়। হিট স্ট্রোক হলে রোগী সব সময় সব জেনে থাকেন না তাই এই সময় যদি আপনি তাকে জল দেন তাহলে সেই জল শ্বাসনালীতে ঢুকে দম বন্ধ হয়ে প্রাণনাশের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
হিটসকে আক্রান্ত হলে প্রথমেই হাইপোথ্যালামাস বিকল হয়। এই হাইপোথ্যালামাসে থাকা থার্মোস্ট্যাট শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেহে তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে থাকে, যা প্রচণ্ড ঠান্ডায় বা প্রচন্ড গরমে বাড়বে না কমবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করে এই হাইপোথ্যালামাস। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে দেহে তাপমাত্রা হঠাৎ করে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ঘাম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় এবং শুরু হয়ে যায় সমস্যা।
কিভাবে বুঝবেন আপনি আক্রান্ত কিনা?
আক্রান্তদের শরীর প্রচুর গরম হয়ে গেলেও কোন ঘাম থাকে না। শরীরে হতে পারে মারাত্মক অস্থিরতা এবং খিচুনি। আবার অনেক সময় তীব্র ঘাম হয়ে বমি বমি ভাব, চোখ ঝাপসা হয়ে যাওয়া, অসম্ভব ক্লান্তি হতে পারে। এই সময় ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে আক্রান্তদের। কুঁচকিতে বা বগলে বরফ দিলে অনেকটা সুস্থ বোধ করবেন রোগী।
কাদের ঝুঁকি সব থেকে বেশি?
শিশু বা বয়স্কদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা সব থেকে বেশি। এছাড়া যাদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মধ্যে সমস্যা রয়েছে তাদেরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত এই গরমকালে।
হিটস্ট্রোক এড়াতে কি কি করনীয়?
প্রথমেই বাইরে বেরোলে রোদ চশমা, ছাতা এবং জল সবসময় নিয়ে যেতে হবে সঙ্গে। সূর্যের আলো যাতে সরাসরি গায়ে না লাগে সেদিকে নজর দিতে হবে। গা ঢাকা হালকা সুতির পোশাক পড়তে হবে। বেশি বদ্ধ জায়গায় বেশিক্ষণ না থাকাই ভালো। বেশি ঘামলে ওআরএস জল পান করা শ্রেয়।