বাংলায় কার্তিক পুজোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কার্তিক ঠাকুর মানে পরনে কোঁচানো ধুতি, গায়ে দামি চাদর, সুন্দর গোঁফ, চুলের বিন্যাস চমৎকার। বিশ্বাস করা হয় যে, কার্তিক পুজো পরিবারে সন্তান আনতে পারে। সেই কারণেই নিঃসন্তান দম্পতির দরজার সামনে কার্তিক ঠাকুর ফেলে যাওয়ার রেওয়াজ দেখা যায়। ঘরের সামনে কার্তিক ঠাকুর পাওয়া গেলে সেই ঠাকুরকে টানা তিন বছর পুজো করা হয়। এই পুজোয় ভক্তির চেয়ে ভগণের প্রতি আদরের ভাগ বেশি। দেবতা কার্তিক এখানে সন্তান রূপে পূজিত হন, আবার সন্তানপ্রদানকারী হিসাবেও পূজিত হন। আবার তিনি সকল যৌনকর্মীদের চোখে ‘বাবু’ হিসাবে খাতির যত্ন পেয়ে থাকেন।
যৌনকর্মীরা চান, তারাও যেন এমন ‘বাবু’ পান সারা বছর। আর সেই কামনা নিয়েই প্রতি বছর কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে তারা ঘরে পুজো করেন কার্তিক ঠাকুরের। যদিও সেই পুজোয় সাধারণ মানুষের প্রবেশের অধিকার থাকে না। তারা নিজেদের মধ্যে নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দে দিন কাটান। কলকাতার সবচেয়ে পরিচিত এবং প্রধান যৌনপল্লি সোনাগাছিতে কার্তিক পুজো মানেই জমজমাট উৎসব। প্রতিবছর কলকাতার প্রধান যৌনপল্লি সোনাগাছিতে প্রতিটি ঘরের অন্দরে পালিত হয় কার্তিক পুজো। তবে, এই বছর প্রথমবার যৌনকর্মীরা সকলে মিলে একটিই কার্তিক পুজো করছেন। আর বিশেষ বিষয় হলো, এই পুজোর আয়োজনে রয়েছেন যৌনকর্মীদের সন্তানেরা।
সোনাগাছির যৌনকর্মীদের সন্তানেরা ঠিক করেছেন যে, এবছর পুজো হবে বারোয়ারি, তাই ১৬ই নভেম্বর শনিবার সোনাগাছির শীতলা মন্দিরের পাশে আলোয় ভরা মণ্ডপে পালিত হবে কার্তিক পুজো। ওইদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা আসবেন উদ্বোধন করতে। এই উদ্বোধন শেষ হওয়ার পর সারা রাত ধরে চলবে পুজো এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোনাগাছির পুজোয় কার্তিক পুজোয় বাকি সব উপকরণের থেকে বেশি থাকবে খেলনা, যেমন ঘুড়ি, লাটাই, লাট্টু, ব্যাটারিচালিত গাড়ি, মাটির পুতুল।
যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির মুখপাত্র মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, কেবলমাত্র ভালো গ্রাহক পাওয়ার জন্যই নয়, সন্তান পাওয়ার জন্যও যৌনকর্মীরা কার্তিকের পুজো করেন। সোনাগাছির প্রবীণা যৌনকর্মী শ্যামলী সাঁতরা বলেন, ‘‘আমরা জানি কার্তিক ঠাকুর বিয়ে করেননি। তিনি আইবুড়ো। আমরাও চাই অবিবাহিত বাবু আসুক জীবনে। যাকে স্বামী ভাবা যাবে। তাই আইবুড়ো কার্তিক আমাদের এত ভাল লাগে।’’