গত শুক্রবার আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে এক যুবতী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায় যে, ওই তরুণীর দুই চোখ থেকে রক্ত গড়াচ্ছিল। হাত, আঙুল, পা, পেট-সহ দেহের নানা জায়গায় ছিল আঘাতের চিহ্ন। তদন্তকারীরা প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করছেন যে, অপরাধের আগে যুবতীর উপর নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়েছিল। এরপর একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গেছে যে, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ অভিযুক্ত একবার হাসপাতালে ঢুকেছিলেন। তারপর বেরিয়ে মদ খেয়ে মত্ত অবস্থায় ফের ভোর ৪টে নাগাদ আবার হাসপাতালে ঢোকেন।
প্রবেশের সময়ে তার গলায় একটি ব্লুটুথ হেডফোন দেখা গেছিল, তবে বেরোনোর সময়ে সেটি ছিল না। পরে ঘটনাস্থল থেকে ওই হেডফোনের ছেঁড়া অংশ উদ্ধার করা হয়। এই হেডফোনের সূত্রে এবং সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে শুক্রবার রাতে প্রথমে আটক করা হয়েছিল। আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত ওই যুবক পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর যুবতী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের কথা স্বীকার করে নেন তিনি। এরপরই তাকে শনিবার সকালে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট তিনি ভিতরে ছিলেন। সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়ার কারণে হাসপাতালে ঢুকতে বা বেরোতে তাঁর সমস্যা হয়নি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের সূত্রে আরো জানা যায় যে, ধৃতের মোবাইল ফোনে পর্নোগ্রাফির বহু ভিডিয়ো রাখা ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ধৃত যুবকের মানসিক বিকৃতি রয়েছে। তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে জানা গেছে, ওই ধৃত যুবক অপরাধের কথা স্বীকার করলেও এখনও তার মধ্যে কোনো অপরাধবোধ দেখা যাচ্ছে না। অভিযুক্ত জেরার সময় বলেছেন, ‘‘ফাঁসি দিলে দিন।’’ নিজের কৃতকর্মের জন্য কোনোরকম অনুতাপবোধ তো নেই, বরং এখনও তার মেজাজ উদ্ধতই। শনিবার ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তাকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এদিকে এই ঘটনার পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
সর্বত্র উঠছে একটাই দাবি, ‘বিচার চাই’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওই অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তির কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কেউ এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা না-রাখতে পারলে যেকোনো এজেন্সিকে দিয়ে এর তদন্ত করাতে পারেন। তাতে রাজ্য সরকারের কোনো আপত্তি নেই।