গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রের বিলম্বিত বাজেট পেশের পরেই রাজ্যে পাড়ায় পাড়ায় দুর্গাপুজোর বাজেট তৈরি শুরু হয়ে গেছে। আসলে কলকাতা-সহ জেলার বড় পুজো কমিটিগুলি একটা পুজোর শেষেই পরের বছরের পূজোর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেয়, কিন্তু মাঝারি বা ছোটখাটো পুজো কমিটিগুলি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুদান ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। এইদিন নির্মলা সীতারামন দেশের বাজেট ঘোষণার পরেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবারের পুজোর বাজেট বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই বিছির দুর্গাপুজোর জন্য ক্লাবগুলিকে ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। পরের বছর তা ১ লক্ষ করা হবে বলেও জানান তিনি। এর পাশাপাশি তিনি ‘ফায়ার লাইসেন্স’ মকুব এবং বিদ্যুতের বিলের ওপর ছাড দেওয়ার কথাও ওইদিন ঘোষণা করেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর এহেন ঘোষণায় বেজায় খুশি পুজো কমিটিগুলি, কিন্তু তার সঙ্গে খানিকটা চিন্তাও রয়েছে যে, ওই অর্থ কোন কোন খাতে খরচ করা হবে।
আসলে দুর্গাপুজোর জন্য অনুদান দেওয়া হলেও সেই টাকা পুজোয় ব্যয় করা যায় না। সাধারণ মানুষের স্বার্থে কিছু করার জন্য খরচ দেখাতে হয় এবং সেই মর্মে নথিও জমা করতে হয়, তবেই পরের বছরের অনুদান পাওয়া যায়। অবশ্য প্রথম দিকে এই হিসাব জমা দেওয়ার এত কড়াকড়ি ছিল না। ২০১৮ সালে প্রথমবার পুজো উদ্যোক্তাদের ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় পুজো বাবদ বিদ্যুতের বিলে ২৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে সেই অনুদানের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা হয় এবং করোনার সময়ে এক লাফে তা গিয়ে ঠেকে ৫০ হাজার টাকায়। এরপর ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৬০ হাজার এবং ২০২৩ সালে এই অনুদানের পরিমাণ করা হয় ৭০ হাজার টাকা। এই বছর সেই অনুদানের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা, ক্লাবগুলির পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য আর্থিক অনুদান ঘোষণা করেছিলেন।
বাছাই করা ক্লাবগুলি প্রথম বছরে এককালীন ২ লাখ টাকা এবং পরবর্তী ৩ বছর ১ লাখ করে মোট ৫ লাখ টাকা পেত। ২০২০ সাল থেকে ওই প্রকল্পে অর্থ দেওয়ার কাজ স্থগিত রাখা হয়েছিল করোনা মহামারীর সময় উপস্থিত হওয়ায়। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে রাজ্যের ক্লাবগুলিকে বার্ষিক অনুদান দেওয়ার প্রকল্প পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় নবান্ন, তবে পুজো কমিটির অনুদান নিয়ে একাধিক মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। ২০২২ সালে রাজ্য সরকারকে পুজোর মুখে কলকাতা হাইকোর্ট ছয় শর্ত বেঁধে দেয়। সেই শর্তে বলা হয়েছিল, অনুদানের অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত নথি হাই কোর্টে জমা দিতে হবে। এর জন্য রাজ্যকে তিন মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল। আর তারপর থেকেই রাজ্য সরকার টাকা খরচ নিয়ে পুজো কমিটিগুলোর উপর নথি জমা দেওয়ার চাপ দিতে শুরু করে।
প্রকৃত নিয়ম অনুযায়ী পুজো কমিটিগুলোকে এখন পুলিশের ‘আসান’ অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়, যেখানে সব রকম প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়া যায়। দশ বছর ধরে পুজো চলছে এমন কমিটিগুলি পুজোর অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারে। এছাড়া, গোটা রাজ্যজুড়ে যত পুজো হয়, তাদের পুজোর পরে স্থানীয় থানায় সব হিসাব জমা দিতে হয়।