সম্প্রতি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইভিএম অর্থাৎ বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে ‘কারচুপির’ অভিযোগে বার বার সরব হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, রাজ্যের একটি ভোট-কেন্দ্রে জোড়াফুলে বোতাম টিপলেও ভোট নাকি চলে যাচ্ছে পদ্মে। সম্প্রতি সমস্ত ভোটের বুথে ইভিএম-এর ফলাফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটে জমা থাকা স্লিপ মিলিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছিল, কিন্তু সেই আর্জি খারিজ হয়ে যায়। ইভিএম কারচুপি নিয়ে বহু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীগণ চলতি লোকসভা ভোটে এবং এর আগেও প্রচারের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সময়ে সরব হয়েছেন, তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, শুধু প্রচারের মঞ্চেই বরাবর এই সমস্ত অভিযোগ আটকে থাকে। অনায়াসেই সরাসরি অভিযোগ জানিয়ে চ্যালেঞ্জ করা গেলেও, কেউই তা করেন না।
এমনকি কমিশন এর তরফথেকে এও জানানো হয়েছে যে, এই চ্যালেঞ্জে হারলে দিতে হবে জরিমানা, হতে পারে জেল। এদিকে কমিশনের বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ জানাচ্ছেন যে, রাজনৈতিক ভাবে যে কেউই এহেন অভিযোগ জানাতেই পারেন। কমিশন এই নিয়ে ভাবেন না, পদক্ষেপও গ্রহণ করে না, কিন্তু যদি সেই অভিযোগ জানিয়ে সরাসরি কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করা হয়, তখন নড়ে চড়ে বসে কমিশন। তখন প্রমাণ করতে হয় সমস্তটা। এক্ষেত্রে নির্বাচনের ৪৯এমএ আইন হলো কমিশনের বিশেষ অস্ত্র। কোনো অভিযোগকারী চ্যালেঞ্জ করলে, তাকে লিখিত বয়ান ভর্তি করে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। যদি সেই অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, তাহলে শাস্তির বিধান মেনে নেওয়ার কথাও সেখানে জানাতে হয়।
এরপর যে ভোট-কেন্দ্র বা বুথের ইভিএম নিয়ে অভিযোগ করা হয়, অভিযোগকারীকে সেই ইভিএমে ফের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। আর সেই সময়ে প্রত্যেক দলের এজেন্টকে সাক্ষী হিসাবে হাজির থাকতে হয়। তাদের সামনে যে ভোটদান হয়, তার সঙ্গে যদি অভিযোগ না মেলে, তখন কমিশন ওই অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৭৭ ধারার আওতায় শাস্তির সুপারিশ করতে পারে। সেক্ষেত্রে ছয় মাসের জেল কিংবা জরিমানা হতে পারে। সারা দেশে চলতি ভোট থেকে একশো শতাংশ ইভিএম-ভিভিপ্যাটের ব্যবহার হচ্ছে। এর বিশেষত্ব হলো, ব্যালট ইউনিটে থাকা কোন দলীয় প্রতীকের পাশের বোতাম টিপে ভোটদান হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ভোটারতা ভিভিপ্যাট-ইউনিটে দেখতে পান। কিছু সময়ের জন্য ভোটারের ভোট দেওয়া প্রতীক-সম্বলিত স্লিপ ভিভিপ্যাটে দেখা যায়। এরপর তা সেখানেই জমা হয়।
কমিশনের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিজ্ঞানসম্মত এই পদ্ধতিকে হ্যাক করা একপ্রকার অসম্ভব। এই বিষয়েও অবশ্য রাজনৈতিক অভিযোগ ওঠা থামেনি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন ইভিএমে ‘ফুল বদলের’ কথা বলেছেন, তেমনই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ইভিএমে কারচুপি না হলে মোদীর হার নিশ্চিত।